তুরস্কের ওপর রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশঃ নভেম্বর ২৯, ২০১৫ সময়ঃ ৯:০৬ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:৪৫ অপরাহ্ণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

Russiaযুদ্ধবিমান ভূ-পাতিত করার কারণে তুরস্কের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে রাশিয়া। সিরিয়া-তুরস্কের সীমান্তে একটি রুশ যুদ্ধবিমানকে আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগে ভূপাতিত করে তুরস্কের প্রতিরক্ষা বাহিনী। এর জবাব দিতেই এরূপ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে রাশিয়া।

শনিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের জারিকৃত এক ফরমানে (ডিক্রি) বলা হয়েছে, তুরস্ক থেকে আমদানি, রাশিয়ায় তুরস্কের কোম্পানিগুলো ও শ্রমিক এবং রাশিয়ার কোম্পানিতে তুর্কিদের কাজ নিষিদ্ধ করা হলো। ফরমানে দুই দেশের মধ্যে তালিকাভুক্ত বিমানের ফ্লাইটগুলোও বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বিমান ভূপাতিতের ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ বললেও রাশিয়ার কাছে ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবে পুতিন বলেছেন, তুরস্ক ক্ষমা না চাইলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সেই জবাব দিলেন তিনি।

শুক্রবার এরদোয়ান বলেন, সিরিয়ায় অভিযানের নামে ‘আগুন নিয়ে খেলছে’ রাশিয়া। কিন্তু শনিবার তিনি বিমান ভূপাতের ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ উল্লেখ করে রাশিয়ার কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেন। এর কয়েক ঘণ্টা পর রাশিয়ার পক্ষ থেকে তুরস্কের ওপর বড় ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এতে করে দুই দেশের মধ্যে সব ধরনের সম্পর্ক চরম অবনতির দিকে যাচ্ছে।

তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক অনেক ভালো ছিল। তুরস্কের দ্বিতীয় বাণিজ্য অংশীদার রাশিয়া। প্রতিবছর রাশিয়ার প্রায় ৩০ লাখ লোক তুরস্ক ভ্রমণে যায়। এখন সব দিক দিয়েই তুরস্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সেই সঙ্গে রাশিয়াও কিছুটা।

পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ জানিয়েছেন, তুরস্কের প্রায় ৯০ হাজার নাগরিক রাশিয়ায় কাজ করেন। তাদের পরিবারের সদস্যসহ রাশিয়ায় থাকা তুর্কিদের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ। রাশিয়া তাদের ট্রাভেল কোম্পানিগুলোকে তুরস্কে ভ্রমণ প্যাকেজ পরিচালনা না করতে নির্দেশ দিয়েছে। ওদিকে তুরস্ক তার নাগরিকদের ‘খুব প্রয়োজন’ না হলে রাশিয়া ভ্রমণ বন্ধ রাখতে বলেছে। রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কের বড় ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। রাশিয়াই তাদের দ্বিতীয় বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার। গত বছর ৩০ লাখের বেশি রুশ পর্যটক তুরস্ক ভ্রমণ করেন।

পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ শনিবার বলেন, ৯০ হাজারের মতো তুরস্কের নাগরিক রাশিয়ায় কর্মরত আছেন। তাদের পরিবারের সদস্যদের হিসাবে নিলে রাশিয়ায় অবস্থানরত দেশটির নাগরিকদের সংখ্যা দাঁড়ায় দুই লাখের কাছাকাছি।

পুতিনের জারি করা ডিক্রিতে তুর্কিদের কাছে ‘প্যাকেজ’ বিক্রি বন্ধ রাখতে ট্যুর অপারেটরদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যদিকে শনিবারই তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা সতর্ক বার্তায় ‘পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত’ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাশিয়া সফর থেকে বিরত থাকতে নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। শুক্রবার তুরস্কের সঙ্গে ভিসাবিহীন ভ্রমণ ব্যবস্থা স্থগিত করেছে রাশিয়া। এরদোয়ান উত্তেজনা প্রশমনে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক চাইলেও তার আগে তুরস্ককে ক্ষমা চাইতে হবে বলে শর্ত দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।

রুশ জঙ্গি বিমান ভূ-পাতিতের ঘটনায় নিজেদের নির্দোষ দাবি করে তুরস্ক বলছে, বিমানটি তাদের আকাশ সীমায় অনুপ্রবেশ করে এবং বেশ কয়েকবার সতর্ক করার পরেও তা উপেক্ষা করা হয়। তবে মস্কো বলছে, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাদের এসইউ-২৪ যুদ্ধবিমান ভূ-পাতিত করা হয়। সিরিয়ার আকাশ সীমায় থাকা অবস্থায় তুরস্কের জঙ্গিবিমান থেকে সেটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়।

হামলার আগে বিমানটি রাশিয়ার তা শনাক্ত করা হয় নি বলে তুরস্কের পক্ষ থেকে যে দাবি করা হয়েছে তাও নাকচ করেছেন পুতিন। তিনি বলছেন, এটা সহজেই শনাক্ত করা যায় এবং এর ফ্লাইট সম্পর্কিত তথ্য তুরস্কের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া হয়েছিল।

গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে আইএসসসহ বিভিন্ন সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াইরত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারকে সহযোগিতার লক্ষ্যে সেদেশে বিমান হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। গত ৩০ অক্টোবর থেকে তুরস্কের প্রতিবেশী দেশটিতে রাশিয়ার এই অভিযানের সমালোচনা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো। যদিও আইএস দমনের কথা বলে বছরখানেক ধরে সিরিয়ায় বিমান হামলা চালাচ্ছে তারা।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/এফটি

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G